একুশ আমার অহংকার

http://lovemattersinfo.blogspot.com/2014/10/blog-post_6.htmlমাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ১৯৪৮ সালে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর আজকের বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। এক স্বাধীনতাহীন স্বাধীনতা। জনতার সে ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। পাকিস্তানের গভর্ণর মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। সে ঘোষণার পর ফুঁসে ওঠে বাঙালী। শুরু হয় আন্দোলন। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার সে আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সৃষ্টি হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ইতিহাস। বুকের রক্তে লেখা হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা।
রক্তে রঞ্জিত থোকা থোকা ফুল দিয়ে সাজানো হয় বাংলা মাকে।  সেসব ফুলের নাম সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিক। সে ফুল দিয়ে আজও বাংলাদেশের মানচিত্র
http://lovemattersinfo.blogspot.com/2014/10/blog-post_6.htmlমাতৃভূমি রক্ষার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্ণর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার অদ্ভুত ঘোষণার পর ফুঁসে উঠেছিল গোটা দেশ। গঠন করা হয়েছিল সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।
১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সে ঘোষণা পুনরায় উচ্চারিত হলে দেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেঁটে পড়ে। ঘোষণা করে বিভিন্ন কমসূচি। সে কর্মসূচি অনুযায়ী একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল গণ-পরিষদ ঘেরাও। কিন্তু শাসক চক্র সে কর্মসূচি বানচাল করতে জারি করেছিল ১৪৪ধারা।

কিন্তু সেখানেই থমকে যায়নি ইতিহাস। বরং দেশের সাহসী ছাত্র-জনতা সেদিন জন্ম দিয়েছিল এক নতুন ইতিহাসের। সে ইতিহাস আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বড় বেশী গৌরবের ছিল সে ইতিহাস। ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাজপথে রক্ত আর আতœাহুতি দেয়ার মাঝে মাইলফলক সৃষ্টি করে। যে মাইলফলক ১৯৭১ সালে ৫৫হাজার ৫শ৯৮ বর্গমাইল বাংলাদেশের আকৃতি নেয়।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমিকি ভুলিতে পারি।প্রখ্যাত কথাশিল্পী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত অমর এবং কালজয়ী প্রভাতফেরীর গান যেমন আমরা ভুলতে পারিনা, তেমনি ভুলতে পারিনা আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদের এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রক্তভেজা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু আজ। আর ফেব্রুয়ারির ইতিহাস বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা রক্ষার ইতিহাস। সেতো প্রতিটি বাঙালীর হৃদপিন্ডে খোদাই করে লেখা।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একটি বাংলা গান, যে গানের কথায় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখে সংঘটিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের করুণ ইতিহাস ফুটে উঠেছে। সাংবাদিক লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গানটি রচনা করেন। প্রথমে আবদুল লতিফ গানটি সুরারোপ করেন। তবে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এটিই এখন গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তাঁর 'জীবন থেকে নেওয়া' চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করেন। বর্তমানে এই গানটি ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, সুইডিশ, জাপানিসহ পাঁচটি ভাষায় গাওয়া হয়
গানের কথা


আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।
প্রকাশ
গানটি একটি খবরের কাগজের শেষের পাতায় একুশের গান শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়। তখন গীতিকারের নাম ছাপা হয়নি। পরবর্তীতে অবশ্য গীতিকারের নাম ছাপা হয় ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় গানটি। তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে
রচনার ইতিহাস
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ ভাষা আন্দোলনকারী ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায়।এতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ ছাত্র আহত হয়। সেসময় ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকা মেডিকেলে যান আহত ছাত্রদের দেখতে। ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে তিনি মাথার খুলি উড়ে যাওয়া একটি লাশ দেখতে পান। সেটি ছিল ভাষা সংগ্রামী রফিকের লাশ। লাশটি দেখে তাঁর মনে হয়, এটা জেন নিজের ভাইয়েরই রক্তমাখা লাশ। তৎক্ষণাত তাঁর মনে গানের প্রথম দুইটি লাইন জেগে উঠে। পরে কয়েকদিনের মধ্যে ধীরে ধীড়ে তিনি গানটি লিখেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রকাশিত লিফলেটে এটি 'একুশের গান' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত 'একুশে সংকলনে' এটি প্রকাশিত হয়
তৎকালীন যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কবিতাটি আব্দুল লতিফকে দিলে তিনি এতে সুরারোপ করেন। আব্দুল লতিফ তখন এটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া শুরু করেন। ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র কলেজ প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টা করার সময়ও গানটি গেয়েছিল। গানটি গাওয়া লেখার অপরাধে ঢাকা কলেজ থেকে ১১জন ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়েছিল
পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ, যিনি সেসময়কার একজন নামকরা সুরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন। বর্তমানে এটিই গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সব অঞ্চল থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শত শত মানুষ এই গান গেয়ে শহীদ মিনার অভিমুখে খালি পায়ে হেঁটে যান
ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরীতে এই গান গেয়ে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যায়। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে
http://lovemattersinfo.blogspot.com/2014/10/blog-post_6.html


Comments

Popular posts from this blog

Deactivate Facebook Account For Killing FB Addiction

Bangla Health । বাংলা হেলথ | Health News and Information

সেক্স বেশীক্ষন করার প্রাকৃতিক উপায় কি?